
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রবাসী আয়ের পালে হাওয়া লেগেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। তবে এর মধ্যেও সাত ব্যাংকে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। আর কিছু ব্যাংকে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ খুবই সামান্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র দেখা দেখা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম ১৯ দিনেই এসেছে ১৭১ কোটি ৮৭ লাখ ২০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ২০ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। আর প্রতিদিন আসছে ৯ কোটি ডলারের বেশি বা ১১০৪ কোটি টাকা।
তথ্য বলছে, এপ্রিলের প্রথম ১৯ দিনে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৩ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, বিশেষায়ীত দুই ব্যাংকের মধ্যে একটির মাধ্যমে (কৃষি ব্যাংক) এসেছে ৯ কোটি ডলারের বেশি। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে প্রায় ৯৯ কোটি ডলার। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৩ লাখ ২০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স।
এর মধ্যে সাতটি ব্যাংক থেকে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। যার মধ্যে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকও রয়েছে। যেসব ব্যাংক কোনো রেমিট্যান্স আসেনি সেগুলো হলো- রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটিজেন ব্যাংক, আইসিটি ইসলামী ব্যাংক এবং পদ্মা ব্যাংক। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।
এর আগে সদ্য বিদায়ী মাস মার্চের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৩.২৯ বিলিয়ন (৩২৯ কোটি ডলার) ডলারের রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। যা ছিল দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ মাইলফলক।
এদিকে দেশে প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক ধারায় বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। চলতি এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেশের মোট রিজার্ভ বেড়ে প্রায় ২৭ বিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ প্রায় ২১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৬ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৭৩ কোটি ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৩৯ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার ও মার্চে সব রেকর্ড ভেঙে ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। অর্থাৎ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর টানা ৭ মাস দুই বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে।