জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অপশাসন-দুঃশাসনমুক্ত, বৈষম্যহীন, ইনসাফপূর্ণ, তারুণ্য সমৃদ্ধ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে আল ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশ ও জাতির প্রেক্ষাপটে ৭ নভেম্বর একটি ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী শাসকচক্র আমাদেরকে আমাদের ইতিহাস জানার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ১৯৭৫ সালের জুনে আওয়ামী ফ্যাসীবাদী সরকার দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত মাত্র ৪টি পত্রিকা বাদে সব গণমাধ্যমের ডিক্লারেশন বাতিল করে গণমানুষের কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল। এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন সে সময়ের তরুণ সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন এবং কর্নেল এমএজি ওসমানী। কিন্তু এজন্য তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও হতে হয়েছিল। এটিই ছিল বাস্তবতা। সে সময়ের বাকশাল প্রতিষ্ঠিত থাকলে দেশে কোন পত্রিকাই থাকত না। মানুষের অধিকারও হতো ভূলন্ঠিত। মূলত, বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী-বাকশালীরা দেশের গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছিল। তিনি মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২০২৪-এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত শাহাদাত বরণকারী সব শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং আহত-পঙ্গুত্ববরণকারীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
জামায়াত আমির বলেন, জামায়াত দেশ ও জাতির মুক্তির জন্য দীর্ঘ পরিসরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণের জানমাল আমাদের কাছে পবিত্র আমানত। আমরা দেশ ও জাতির স্বার্থে সব সময় দায়িত্বশীল আচরণ করে এসেছি। কিন্তু আমরা এদেশে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত- নিপীড়িত রাজনৈতিক দল। স্বাধীনতার পর আমাদেরকে দু’দফা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বরাবরই পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করে এসেছি। তারপরও আমাদেরকে নিষিদ্ধ হতে হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, ‘গরম ভাতে বিড়াল বেজার’। মূলত, স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারই দেশে নেতিবাচক ও নির্মূলের রাজনীতির সূচনা করেছে। তারা আমাদের দিয়ে নাস্তা করারও ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিই নি।
আমিরে জামায়াত বলেন, মূলত বৈষম্য ও অপশাসনের কবর রচনা করে দেশকে দুঃশাসনমুক্ত এবং আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ৭ নভেম্বর সিপাহী- জনতা যুগপৎভাবে রাজপথে নেমে এসেছিল। সংগ্রামী জনতা ফুলের পাপড়ি দিয়ে দেশপ্রেমী বিপ্লবীদের বরণ করে নিয়েছিলেন।ষড়যন্ত্রকারীরা দেশটাকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু বীর জনতা তাদের সে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ৭ নভেম্বর ব্যর্থ হওয়ার পর তারা কথিত বিডিআর বিদ্রোহের নামে দেশের ৫৭ জন দেশপ্রেমী ও চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সীমান্তকে অরক্ষিত করে ফেলেছে। তাই ৭ নভেম্বরের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে শপথ গ্রহণ করতে হবে।
এসময় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়িদের বিচারের আওতায় আনার আহবান জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এসময় অধিপত্যবাদী অপশক্তি আমাদের অর্জিত স্বাধীনতাকে কেড়ে নিয়ে দেশকে গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ও সশস্ত্র বাহিনী তাদের সে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি। তারা এখনো আমাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। কিন্তু আবু সাঈদ ও মুগ্ধরা আমাদেরকে ভয়কে জয় করতে শিখিয়েছে।
৭ নভেম্বরের চেতনায় দেশ ও জাতিস্বত্ত্বাবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সবাইকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান তিনি।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মাদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য হেমায়েত হোসাইন, ইয়াছিন আরাফাত ও ড. মাওলানা আহসান হাবিব এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।