Image description

গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের এই যুগে আগের রাজতন্ত্র ফেরত আনতে চান না আধুনিক বিশ্বের মানুষেরা। কিন্তু নেপালে হলো এর উল্টোটা। তারা রাজতন্ত্র ফিরে পেতে চাইছেন। শুধু তাই নয়, রাজতন্ত্রে ফিরে যেতে রাস্তায় নেমে পড়েছেন তারা। ক্ষমতাচ্যুত রাজাকে ফের ক্ষমতায় দেখতে চাইছেন। এই রাজাকে তারাই ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। 

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে গতকাল রোববার এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। দেশটির সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ পশ্চিমাঞ্চল থেকে ট্রিপ দিয়ে কাঠমান্ডুতে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলে হাজারো জনতা তাঁকে স্বাগত জানান। রাস্তা ভরে যায় জনতায়।

দেশের চলমান অবস্থা নিয়ে অসন্তোষ জানানোর পাশাপাশি বিলুপ্ত রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের এই অনুসারীরা। এ জন্য তাঁকে স্বাগত জানাতে ১০ হাজারের বেশি সমর্থক ত্রিভুবন বিমানবন্দরের প্রধান প্রবেশপথের কাছে জড়ো হন।

জড়ো হওয়া মানুষেরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘রাজার জন্য রাজপ্রাসাদ খালি করুন। রাজা ফিরে আসুন, দেশকে বাঁচান। আমাদের প্রিয় রাজা দীর্ঘজীবী হোন। আমরা রাজতন্ত্র চাই।’ এমনকি তারা ধর্মনিরপেক্ষতা থেকেও বেরিয়ে আসার তাগিদ দেন।

ভিড়ের কারণে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসা এবং বিমানবন্দরগামী যাত্রীরা হেঁটে যেতে বাধ্য হন। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিমানবন্দর প্রাঙ্গণে প্রবেশে বাধা দিয়েছে শত শত দাঙ্গা পুলিশ–এমন দৃশ্যও দেখা গেছে ভিডিওতে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট বলছে, ২০০৮ সালে নেপালের ২৪০ বছরের পুরোনো হিন্দু রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করার বিষয়ে পার্লামেন্টে ভোট হয়। ভোটাভুটিতে রাজতন্ত্র বিলোপের পক্ষে রায় এলে রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ পদত্যাগ করেন। এরপর নেপালে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

তখন থেকে এখন পর্যন্ত নেপাল ১৩টি সরকার পেয়েছে। বছরের পর বছর ধরে দেশটির অনেকে প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থার প্রতি হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের দাবি, প্রজাতন্ত্রের সরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ। অর্থনীতির নাজুক অবস্থা এবং ব্যাপক দুর্নীতির জন্যও প্রজাতন্ত্রকে দায়ী করেছেন তাঁরা।

২০০১ সালে নেপালের তৎকালীন রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বড় ভাই বীরেন্দ্র নিহত হওয়ার পর ওই বছরই রাজা হিসেবে জ্ঞানেন্দ্রর অভিষেক হয়। রাজতন্ত্রবিরোধী মাওবাদী বিদ্রোহীদের পরাস্ত করার জন্য তিনি কাজ করছেন বলেও জানান।

বর্তমানে ৭৭ বছর বয়সী জ্ঞানেন্দ্র ২০০৫ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তখন তাঁর নির্বাহী ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল না।

তবে ২০০৫ সালে জ্ঞানেন্দ্র পুরোপুরিভাবে ক্ষমতা দখল করেন। রাজা জ্ঞানেন্দ্র তখন সরকার ও পার্লামেন্ট ভেঙে দেন, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের কারাগারে পাঠান। তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং দেশশাসনের কাজে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেন।

এসব পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে রাজা জ্ঞানেন্দ্রর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। একপর্যায়ে ২০০৬ সালে জ্ঞানেন্দ্র একটি বহুদলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। মাওবাদীদের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে সরকার। এর মধ্য দিয়ে এক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান হয়।

এখন রোববার ত্রিভুবন বিমানবন্দর এলাকায় সমবেত মানুষেরা বলেছেন, দেশের পরিস্থিতি যেন আরও খারাপের দিকে না যায়, তা ঠেকাতে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তনের আশা করছেন তাঁরা।

এর মধ্যে একজন বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘দেশে এখন সবচেয়ে বাজে যে বিষয়টি ঘটছে তা হলো, ব্যাপক দুর্নীতি। ক্ষমতায় থাকা কোনো রাজনীতিবিদ দেশের জন্য কিছুই করছেন না।’

দুই দশক আগের বিক্ষোভের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘রাজতন্ত্রকে উৎখাতকারী বিক্ষোভে আমি ছিলাম। কারণ, তখন মনে হয়েছিল, এতে দেশের উপকার হবে। তবে আমার ধারণা ভুল ছিল। জাতি আরও দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। তাই আমি আমার মত পরিবর্তন করেছি।’