প্রযুক্তি জগতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে যার শক্তিতে বদলে গেছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবনযাত্রার গতিপথ। রেলযোগাযোগ, অটোমোবাইল, রেডিও, টেলিভিশন, ট্রানজিস্টর, পার্সোনাল কম্পিউটার, ডট-কম (ইন্টারনেট), স্মার্টফোন হয়ে বর্তমানে প্রযুক্তি বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি।
গত শতাব্দীর ৯০’র দশকের ডট-কম বাবলের (বুদবুদ) মতোই এআই প্রযুক্তিকে ঘিরেও তৈরি হয়েছে এক বাবল, যার তীব্রতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিশেষ করে ২০২২ সালের নভেম্বরে ওপেনএআই জেনারেটিভ এআই-ভিত্তিক চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটি’ বাজারে আনার পর থেকেই এআই প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি বেড়েছে এর ব্যাপ্তি।
এআই-এর বিশাল সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে এই প্রযুক্তির উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। টেক জায়ান্টরা নিজেরা যেমন বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করছে তেমনি নিত্যনতুন এআই সলিউশন বা সার্ভিসগুলো কিনে নিতেও তাঁরা খরচ করছে বিশাল অঙ্কের অর্থ।
এবারে গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুন্দর পিচাই জানিয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠান ১২০ মিলিয়ন ডলারের ‘গ্লোবাল এআই অপরচুনিটি ফান্ড’ তৈরি করতে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য বিশ্বব্যাপী ‘এআই বিভাজন’ এড়ানোর জন্য সারা বিশ্বে এআই বিষয়ক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি করে দেয়া।
গত শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের ‘সামিট অব দ্য ফিউচার’ শীর্ষক সম্মেলনে এআই প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন সুন্দর পিচাই। তিনি এআই-কে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ‘ট্রান্সফরমেটিভ’ বা রুপান্তরকারী প্রযুক্তি আখ্যায়িত করে গুগলের এআই শিক্ষা তহবিল গঠনের বিষয়টি ঘোষণা করেন।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুন্দর পিচাই এআই এবং টেকসই উন্নয়ন খাতে ৪টি বিস্তৃত সুযোগের কথা উল্লেখ করেন।
এগুলো হলো: সাধারণ মানুষকে নিজের ভাষায় তথ্য অ্যাক্সেস করার সুযোগ তৈরি করে দেয়া, বৈজ্ঞানিক আবিস্কার ত্বরান্বিত করা, জলবায়ু বিপর্যয় পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতা প্রদান করা, এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করা।
এআই প্রযুক্তির সম্ভাবনার পাশপাশি ঝুঁকি সম্পর্কেও অবহিত করেন পিচাই। ডিপ ফেক এর মতো সমস্যা নিয়ে কথা বললেও পিচাই পরিবেশ ও জলবায়ুর উপর এআই প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে কিছু বলেননি। উল্লেখ্য, পরিবেশের উপর এআই প্রযুক্তির বিরুপ প্রভাব নিয়ে বেশ ক’বছর ধরেই যথেষ্ট সরব পরিবেশবাদীরা। তাস্বত্বেও গুগলের মতো টেক জায়ান্টরা এআই গবেষণায় বড় অঙ্কের বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।
গুগলের এআই তহবিল থেকে বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অংশীদার হিসেবে থাকবে স্থানীয় অলাভজনক ও বেসরকারি (এনজিও) প্রতিষ্ঠানসমূহ।
সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি প্রশমনে স্মার্ট পণ্য নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি স্মার্ট পণ্যের ক্ষেত্রে জাতীয় সংরক্ষণশীল নীতি অনুসরণ না করার আহ্বান জানান পিচাই। অন্যথায়, তিনি মনে করেন, এআই বিভাজন যেমন বিস্তৃত হবে তেমনি এআই প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করার পরিসর সীমিত হয়ে পড়বে।
তথ্যসূত্র: টেকক্রাঞ্চ