রাজধানীর খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান জনি হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিমএপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালত আসামির উপস্থিতিতে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজধানীর খিলগাঁও থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক মো. গোলাপ মাহমুদ ঢাকার চিফ ঢাকার মেট্রোপলিটন আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
পুলিশি হেফাজতে ‘ক্রসফায়ারের নামে হত্যার’ অভিযোগের ঘটনার ৯ বছর পর গত ২ সেপ্টেম্বর জনির বাবা ইয়াকুব আলী রাজধানীর খিলগাঁও থানায় এ মামলা করেন। মামলায় সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীসহ ৬২ জন আসামি। এ মামলায় আছাদুজ্জামান মিয়া ১২ নম্বর আসামি। এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভার এলাকা থেকে আছাদুজ্জামান মিয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি খিলগাঁও এলাকায় পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে মো. নুরুজ্জামান নিহত হন।
মামলায় বলা হয়, ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে নূরুজ্জামান জনি ও তার সহপাঠী মইনসহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরাকে দেখতে যায়। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেরার পথে আসামিরা জনি ও মইনকে ডিবি পরিচয় দিয়ে অবৈধভাবে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালায়। পরবর্তীতে তাদের ডিবি ঢাকা মেট্রোপলিটন-দক্ষিণ কার্যালয়ে নিয়ে গিয়েও নির্যাতন চালানো হয়।
ছাত্রদল নেতাকে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যায় গ্রেপ্তার আছাদুজ্জামান তখন নুরুজ্জামান জনির ৭ (সাত) মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুনিয়া পারভিনসহ আত্মীস্বজনরা খিলগাঁও থানা, ডিবি দক্ষিন অফিস, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিসসহ বিভিন্ন থানায় হন্য হয়ে খুঁজে বেড়ায়। আসামিরা জনিকে আটক করেননি বলে জানান। প্রায় ২ দিন ধরে খোঁজাখুঁজি করার পরেও নুরুজ্জামান জনির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পরে গত ২০ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর খেলার মাঠের আশপাশের মানুষজন চিৎকার করা কণ্ঠে কান্নার শব্দ শুনতে পায়। নির্যাতিত ব্যক্তিটি পানি-পানি বলে চিৎকার ও মা-মা বলে আর্তনাদ করতে থাকেন। ঘটনাস্থলের এলাকার পাশে সি-ব্লকের বাসিন্দা লাভলী বেগম রাতের কান্নার শব্দ শুনেছে বলে জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুদ্দিনের স্ত্রী সানজিদা আক্তার সেতু জানান, রাত ৩টার দিকে ওমাগো, মা, মা.. বাঁচাও বলে কয়েকবার চিৎকার শুনেছেন। সেই সময় আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা গুলির শব্দ শুনতে পায়। ভোর রাতে বাদীসহ সাক্ষীরা ও প্রতিবেশীরা খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর মাঠের দিকে গিয়ে পুলিশদের দেখতে পায়। আসামিরা বলে যে, নুরুজ্জামান জনি পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। তার মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। নুরুজ্জামানের বুকের বামে, ডান দিকে, দুই হাতের তালুতে ১৬টি গুলির চিহ্ন ছিল। তার সমস্ত শরীর ঝাঁঝরা করে ফেলে।