কুমিল্লার চান্দিনায় সমাপনী পরীক্ষা চলাকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে ১৫ শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে ঢুকে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে অভিভাবকদের বিরুদ্ধে। এ সময় তাদের হামলায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও তিন সহকারী শিক্ষক আহত হয়েছেন।
রবিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলা সদরের চান্দিনা ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করে পুলিশ।
আহত শিক্ষকরা হলেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাদেকুল ইসলাম কিরণ, বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবু ইউনুছ, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সাইদুর রহমান সুজন ও ধর্মীয় শিক্ষক মো. ইলিয়াছ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকাল ১০টা থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব শ্রেণির গণিত পরীক্ষা শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় বিদ্যালয়ের ৯ নম্বর কক্ষের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে।
সহপাঠী ও শিক্ষকরা তাকে পৃথক কক্ষে নিয়ে বিশ্রামের ব্যবস্থা করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই কক্ষের আরো ১৪ ছাত্রী একইভাবে অসুস্থতা বোধ করায় তাদের চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ১১ জনকে বাড়িতে পাঠিয়ে ৪ জনকে ভর্তি রাখা হয়।
সূত্র আরো জানায়, দুপুর ২টা থেকে দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষা শুরু হলে ১৫-২০ জন অভিভাবক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে শিক্ষকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
তারা বিদ্যালয়ের প্রতিটি পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থী মৃত্যুর গুজব রটিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেন। খবর পেয়ে চান্দিনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নেন এবং একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।
চান্দিনা ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সাদেকুর রহমান কিরণ বলেন, ‘অসুস্থ শিক্ষার্থীদের আমরা তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন তারা প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসা শেষে তাদের সবাই সুস্থ আছে।
দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর আমরা কয়েকজন শিক্ষক অফিসকক্ষে পরীক্ষার খাতা গোছাচ্ছিলাম। এ সময় ১৫-২০ জন লোক এসে আমাদের চারজনকে মারধর শুরু করেন।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান জানান, হাসপাতালে আগত অসুস্থ ছাত্রীরা প্যানিক ডিস-অর্ডারে আক্রান্ত হয়েছিল। এটি বড় কোনো সমস্যা নয়, একজনের দেখাদেখি অন্যরাও আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১ জনকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি চারজনকে এখনো পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
এদিকে শিক্ষকদের ওপর অতর্কিত হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
চান্দিনা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাজমুল হুদা জানান, গুজব রটিয়ে কিছু অভিভাবক এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে একজনকে আনা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও ওই বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি নাজিয়া হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’