ছাত্র-জনতার আন্দোলন তীব্র হওয়ার আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজের চীন সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। গত ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে পিএসসির এক গাড়িচালক কীভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হলেন তা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়।
এর জবাবে শেখ হাসিনা তখন বলেন, ‘আমার বাসার একজন পিয়ন ছিল, সেও ৪০০ কোটি টাকার মালিক! হেলিকপ্টার ছাড়া নাকি চলে না।’
এরপরই আলোচনায় আসেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই ব্যক্তিগত সহকারী (পিয়ন) জাহাঙ্গীর আলম। অভিযোগ পাওয়া যায়, রাজধানীর মিরপুরে বাড়িসহ বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার নামে।
তবে এবার পাওয়া গেল নতুন তথ্য। ৪০০ কোটি নয়, আলোচিত সেই পিয়ন জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাংক হিসাবে ৬২৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রীর কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে ২৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুটি মামলা দায়ের করেছে।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আসামি জাহাঙ্গীর আলম স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে ১৮ কোটি ২৯ লাখ ১০ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করায় এবং তিনি ও তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ ভোগ করার মানসে আটটি ব্যাংকের ২৩টি হিসাবে সর্বমোট ৬২৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার ১০৭ টাকা জমা বা ক্রেডিট ও জমা করা অর্থ বিভিন্ন মাধ্যমে উত্তোলন বা স্থানান্তর করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, জাহাঙ্গীর আলম এসব অবৈধ সম্পদ অর্জন করে নিজের ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে একাধিক হিসাব খুলেছেন। তার আটটি ব্যাংকের ২৩টি হিসাবে সর্বমোট ৬২৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার ১০৭ টাকা জমা ও ৬২৪ কোটি ৬০ লাখ ১৫ হাজার ৬৭১ টাকা উত্তোলিত হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
এ ছাড়া জাহাঙ্গীর আলম তার মালিকানাধীন স্কাই রি এরেঞ্জ নামে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের একটি চলতি হিসাবে শুধু ২০২৪ সালের প্রথম ৫ মাসে (৮৩ দিনে) ১৭৮ কোটি টাকা জমা ও ১৭৮ কোটি ৯৩ টাকা উত্তোলন বা ফান্ড ট্রান্সফার করেন।
অপর একটি মামলায় আসামি করা হয় জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী কামরুন নাহারকে। যেখানে বলা হয়, তিনি নিজ নামে ৬ কোটি ৮০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৪২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদ ভোগ দখলে রাখার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা তৎসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।